১ম সমাবর্তন ২০২২

অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল বাশার
ভাইস-চ্যান্সেলর
সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি (এসইউ)-এর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এম.পি.। মাননীয় সাংসদবৃন্দ,Excellencies, Heads of Diplomatic Missions, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল-এর সম্মানিত চেয়ারম্যান,প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, সমাবর্তন বক্তা প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল (Retd. Professor from SUST), সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত চেয়ারম্যান আলহাজ্জ নজরুল ইসলাম বাবু, এমপি, ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আজিজ, প্রতিষ্ঠাতা ও জেনারেল সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল আলিম,ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত সদস্য জনাব রাশেদ খান মেনন, এমপি, বিভিন্ন সরকারী, আধা সরকারী ও স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে আগমনকারী সম্মানিত ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর ও ট্রেজারারগণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর শামীম আরা হাসান, ট্রেজারার প্রফেসর মোঃ আল-আমিন মোল্লা। এসইউ ট্রাস্টি বোর্ড, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, ডীনবৃন্দ,বিভাগীয় প্রধানগণ, পরিচালকবৃন্দ, শিক্ষকমন্ডলী ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ, আগত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং আমার প্রিয় গ্রাজুয়েটরা! সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি-এর প্রথম সমাবর্তনে আপনাদের সবাইকে জানাই স্বাগতম। সেই সাথে সকলকে জানাই মুজিব শতবর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় চ্যান্সেলর জনাব মোঃ আব্দুল হামিদ কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি হিসাবে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এম.পি. আমাদের মাঝে সভাপতি হিসাবে উপস্থিত থেকে এসইউ-এর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে করেছেন অতীব প্রাঞ্জলতাপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ। আপনার সদয় উপস্থিতির জন্য এসইউ পরিবার এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। মাননীয় চ্যান্সেলরের পরে আপনিই আমাদের ২য় অভিভাবক। আজকের এই মহতি অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসাবে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযু্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে অবসরপ্রাপ্ত শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল-এর সমাবর্তন বক্তৃতা আমাদের সকলকে দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে এবং গ্রাজুয়েটদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে সঠিক নির্দেশনা দিবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সমাবর্তন বক্তা হিসাবে আপনাকে পেয়ে আমরা গৌরববোধ করছি এবং এসইউ-এর পক্ষ থেকে আমি আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

প্রিয় গ্রাজুয়েটবৃন্দ,
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস মহামারির বিদায় লগ্নে তোমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল ১ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে স্ব স্ব স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর সনদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নিবে। তা আজ উৎসবমুখর আনন্দঘন দিনের শুভলগ্নে পূরণ হতে চলেছে। তোমাদের জন্য এই দিনটি যেমন আনন্দের, তেমনি সূচনা করবে কর্মক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হওয়ার নতুন উদ্দীপনা। দেশ-বিদেশে তোমাদের অর্জিত সুনাম বয়ে আনবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতিত্ব ও পরিচিতি। এস.ইউ. পরিবারের সদস্য হিসাবে আবদ্ধ থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদের জন্য গঠন করেছে SU Alumni । তোমাদের অর্জিত ডিগ্রি, বাস্তব শিক্ষা, শ্রম, মেধা ও সৃজনশীলতা হবে তোমাদের ভবিষ্যতের পাথেয় এবং প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের উন্নয়নে রাখবে অগ্রণী ভূমিকা। অর্জিত শিক্ষার মাধ্যমে একজন আদর্শ মানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে অসাম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্ববোধ গঠনে তোমাদের অংশগ্রহণ থাকবে লক্ষণীয় ও অনুকরণীয়। ত্রিশ লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা ও সুখী-সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও আত্নমর্যাদাশীল সোনার বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জিত হবে আজকের নবীন গ্রাজুয়েটদের দ্বারা। প্রিয় গ্রাজুয়েটরা, তোমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি মুহূর্তে সেই সমস্ত অভিভাবক ও গর্বিত পিতা-মাতার অসামান্য অবদানকে, যাদের অনেক ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমে তোমরা এ পর্যন্ত পৌছাতে সক্ষম হয়েছ। সাথে সাথে স্মরণ করো ঐ সমস্ত শিক্ষকবৃন্দকে যাঁদের দ্বারা অক্ষর জ্ঞান থেকে শুরু করে বর্তমান স্তরে এসে তোমাদের জ্ঞানের ও চিন্তাশক্তির পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতি, দেশ তথা বিশ্বকে কিছু দিতে হলে তবে নিজেদেরকে যুগোপযোগী শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে। প্রকৃত শিক্ষাই একটি অনুন্নত দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে পারে। তার জন্য নিজ দায়িত্বে জ্ঞানের সিড়ি অভিভাবক, শিক্ষকবৃন্দ, বই, জার্নাল, ওয়ার্কশপ, সেমিনার এবং অনলাইনের মাধ্যমে সারা জীবন শিক্ষা অর্জনে ব্রতী হতে হবে। এই শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে কর্মক্ষেত্রে লাগানোর জন্য যা দরকার তা হচ্ছে মনোবল, মেধার সঠিক ব্যবহার ও সৎসাহস। সৎসাহসের প্রতিটি পদক্ষেপে কর্মের মাঝে সততার সাথে স্বচ্ছতাও প্রয়োজন। তাহলেই তুমি দেশ প্রেমিক হিসাবে বিবেচিত হবে। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পেছনে কাজ করাও প্রকৃত দেশ প্রেমিকের পরিচয়। আজ তোমাদের ও তোমাদের গর্বিত অভিভাবকদের প্রতি জানাই প্রাণঢালা অভিবাদন। সর্বোপরি সকল গ্রাজুয়েটদের জন্য শ্রষ্টার কাছে সাফল্য, সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

সম্মানিত অতিথিবৃন্দ ,
বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১২ সালে অনুমোদিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর অনুসরণে এবং ইউজিসির নির্দেশনা মোতাবেক ২০১৩ সাল থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেন। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় উপযোগী কর্মদক্ষ মানব সম্পদ ও ভবিষ্যতের যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এসইউ ট্রাস্টি বোর্ডের মাননীয় চেয়ারম্যান এর সুচিন্তিত মতামত ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে শিক্ষানুরাগী অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও এসইউ ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানীয় ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে প্রকৌশলী আবদুল আজিজ ও প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল আলিমসহ সমস্ত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ্য অধ্যাপকবৃন্দকে পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ দিয়ে আসছেন। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এ পাশকৃত নিয়োগ কমিটি কর্তৃক বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেধাবী গ্রাজুয়েটদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে আসছেন। এখানে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চতর ডিগ্রীধারী মেধাবী, সৃজনশীল ও দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী নিয়োগের মাধ্যমে একাডেমিক প্রোগ্রাম চলছে।
বর্তমানে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ টি অনুষদের অধীনে ১২টি বিভাগে মোট ২০টি প্রোগ্রাম চালু আছে। খুব অল্প সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন অনেক। ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিয় সদস্যবৃন্দদের শিক্ষার প্রতি অনুরাগ, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং দূরদর্শিতার কারণেই উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি একটি উচ্চমান সম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের শিক্ষকবৃন্দ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মেধা চর্চা ও বিকাশের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরীতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কিছু শিক্ষক পোষ্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রীর জন্য অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ফ্রান্স ও আমেরিকায় অধ্যয়নরত আছেন।

উপস্থিত সুধীমন্ডলী ,
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বয়সে নবীন হলেও মানসম্পন্ন শিক্ষার ক্ষেত্রে এক আলোকবর্তিকার কাজ করছে। গবেষণা ক্ষেত্রে উৎকর্ষতা সাধনের লক্ষ্যে আমাদের রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানের জার্নাল যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণালদ্ধ বিভিন্ন প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের Institutional Quality Assurance Cell (IQAC) একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষাব্যবস্থা ও Outcome based পাঠদান পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যবৃন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখা পড়ার গুণগত মান বৃদ্ধি ও গবেষণার ক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তা প্রদানে সব সময় উদার হস্ত। এ বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রতিবন্ধি, আদিবাসী এবং দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ শিক্ষা বৃত্তি এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। উল্লেখ্য, ১ম সমাবর্তনে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত যারা ডিগ্রী প্রাপ্ত হয়েছে তাদের মধ্যে মোট ৬৬ জনকে সম্মানজনক চ্যান্সেলর ও ভাইস-চ্যান্সেলর স্বর্ণ পদক দিবেন। আমি তাদের কৃতিত্বের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আজকের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আপনাদের উপস্থিতি এই অনুষ্ঠানকে করেছে গৌরবান্বিত। আমি আমার প্রাণপ্রিয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব সকল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর গ্রাজুয়েটদের কর্মময় উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি। এসইউ ট্রাস্টি বোর্ড, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিলের সকল সদস্যবৃন্দ, সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি ও সংস্থাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আরো ধন্যবাদ জানাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার TV ও জাতীয় পত্রিকা দৈনিক অধিকারসহ অংশগ্রহণকারী সকল মিডিয়াকে, যাঁদের সহায়তা ছাড়া এই সমাবর্তনকে সফল করা সম্ভবপর ছিল না। পরিশেষে, আমি এই সমাবর্তনের সার্বিক সফলতা কামনা করি এবং আবারো মাননীয় সভাপতি, বিশেষ অতিথিবৃন্দসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।
আল্লাহ হাফিজ। জয় বাংলা।